মেহেদীর টুকিটাকি

টুকিটাকি জানার ছোট্ট একটি ব্লগ

সুবাবাংলার সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প

ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহের একটি উৎসের নাম হলো পুঁথি। তবে পুঁথিতে অনেক সময় পরিস্থিতির আলোকে নতুন সংযোজন থাকায় তা পরখ করে নিতে হয়। ঘটনা কেন্দ্রিক পুঁথিগুলোতে তথ্যের সমাহারের পাশাপাশি আবহ সৃষ্টির জন্য অনেক সময় পুঁথিকার বাহুল্য বর্ণনা দিয়ে থাকেন। সেগুলোর বাছ-বিচার করে পুঁথি থেকেও ইতিহাসের অনেক উপাদান সংগ্রহ করা যায়।

সুবাহবাংলা তথা বাংলাদেশের সবচে বড় ভূমিকম্পটি হয়েছিল ১৩০৪ (১৮৯৭) বাংলা সালে। ভূমিকম্প হয়ে যাবার পর পরই সে বছর এ ভূমিকম্প সম্পর্কে দেশের খ্যাতনামা পুঁথিকার মুন্সী আজিমুদ্দীন হানাফি ‘গজবনামা’ নামক একটি পুঁথিতে যে তথ্য পরিবেশন করেছেন তা ইতিহাসের পাঠকগণের খতিয়ে দেখা দরকার। সে নিরিখেই ‘সুবাবাংলার সবচে’ বড় ভূমিকম্প’ শিরোনামে আমার এ লেখার প্রয়াস।
বাংলা সন লিখতে গিয়ে প্রাচীন কাল থেকে আমাদের যে ঐতিহ্য গড়ে ওঠেছে ঠিক সে ধারাকে লালন করতে গিয়ে পুঁথিকার তাঁর পুঁথিটির নাম দিয়েছেন ‘গজবনামা’ বা  ‘সন ১৩০৪ সালের ভূমিকম্প’। এ রকম লিখলে এটি যে বাংলা সনের হিসাব সে বিষয়টি আর বলে দিতে হয় না। ছড়ার ভাষায় বললে বলতে হয়—  আগে সন পিছে সাল/এই হলো বাংলা সাল।
যাক লেখাটি মূলত সন নিয়ে নয় বরং একটি সনে ঘটে যাওয়া বড় একটি ঘটনাকে নিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে (গত ২৪ এপ্রিল ২০১৫) আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়ে গেছে। পরের দিন এবং এরও পরের দিন বাংলাদেশেও এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল, মায়ানমার থেকে যে ভূমিকম্পটির উৎপত্তি সেটিও বাংলাদেশে ৬.৯ মাত্রায় কম্পন দিয়েছে। এ দুটি ভূমিকম্পে এবং এর আকস্মিকতায় বাংলাদেশেও বেশ কয়টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে; বেশ কিছু দালান কাত হয়েছে।
এ ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে মিডিয়ায় প্রতিদিনই নানা খবরাখবর প্রচার করা হচ্ছে। প্রিন্ট মিডিয়ার চেয়ে এ প্রচারণায় ইলেকট্রনিক মিডিয়া অনেক এগিয়ে। সবচে’ বড় কথা হলো— এ ভূমিকম্পকে কেন্দ্র করে নানা গুজব, ঢাকা শহরসহ সারা দেশের শহুরে এবং গ্রামীন বাসিন্দাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ভূমিকম্পের যেহেতু পূর্ব থেকে সতর্কতার কোন জ্ঞান এখনো আমাদের আয়ত্তে আসেনি তাই পূর্বাভাস নিয়ে প্রতিকারের কোন ব্যবস্থাই নেই। তবে ইতোপূর্বে বাংলাদেশে কোন বড় ভূমিকম্প হয়েছিল কী-না, হয়ে থাকলে কবে হয়েছিল এবং এর স্বরূপই বা কী ছিল ইত্যাদি বিষয়গুলো সকলেরই জানার কৌতূহল রয়েছে।
সমকালীন পত্র-পত্রিকাসহ বিভিন্ন গেজেট গ্রন্থে এ ভূমিকম্প সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তা হলো— ভূমিকম্পটি হয়েছিল তদানীন্তন সুবাবাংলার আসামে। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ পূর্ববর্তী গোটা আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার ইত্যাদি সব নিয়েই ছিল বৃহৎ বাংলা বা সুবাহ বাংলা। আর ১৮৯৭ সালের সে ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা হয়েছে আসামে। ফলে এটি ছিল তদানীন্তন বাংলাদেশে উৎপত্তি নির্দেশক ভূমিকম্প। গোটা বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এর প্রভাব অবশ্যই পড়েছিল।
বাংলাদেশের দালানকোঠা, বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট, নদী-নালা, সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল এ ভূমিকম্প। নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভূমিধস, ফাঁটল ইত্যাদি সব মিলিয়ে এটি ছিল সত্যিকার অর্থে এক বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এ বছরটি ইতিহাসে চিহ্নিত হয় ভূমিকম্পের বছর হিসেবে। ১২ জুন ১৮৯৭-এ সংঘটিত এ ভূমিকম্পে গোটা বৃহত্তর বাংলাদেশ ছাড়াও বার্মা, দিল্লী, ভূটান, নেপাল ইত্যাদি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভূমিকম্পটি ছিল ৮.১ থেকে ৮.৭ মাত্রার। ভূমিকম্প পরবর্তী ৯ অক্টোবর, ১৮৯৭ পর্যন্ত অন্তত মোট ১২ বার আফটারশক বা ভূমিকম্প পরবর্তী ভূকম্পন হয় বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়। সে সময়কার ব্রিটিশ রেকর্ডপত্রে এ ভূমিকম্প সম্পর্কে অনেক তথ্য রয়েছে যা দীর্ঘ আলোচনার বিষয়।
১৩০৪ বাংলা সন তথা ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পের ঘটনার বিবরণ দিয়ে ঐ সনেই বাংলা পুঁথি সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল মুন্সী আজিমুদ্দিন হানাফি (১৮৩৭-১৯২২) (কিশোরগঞ্জের দেহুন্দায় জন্মগ্রহণকারী এ পুঁথিকারের রয়েছে ৪৫টি পুঁথি/কিতাব) ‘১৩০৪ সনের ভূমিকম্প অর্থাৎ গজবনামা’ নামে এক পুঁথিকাব্য রচনা করেন। এ পুঁথিটিতে সারা বাংলাদেশের এবং আসাম ও শিলং-এর কোথায় কোথায় কী ঘটেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। অনেকটা আজকালকার পত্রিকার টেলিগ্রাম ইস্যুর ন্যায়। ভূমিকম্প ঘটে যাবার পর পরই তাজা খবরগুলোকে কাব্যিক ধারায় রিপোর্টের আকারে সংরক্ষণ আমাদের আজকালকার সাংবাদিকতায় প্রেরিত রিপোর্টের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। এ পুঁথিটি রচনা করে তিনি ভূমিকম্পের ঘটনাবলী ও দৃশ্যচিত্র ধারণ করে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন।
অবশ্য ভূমিকম্পের কারণ নির্ণয়ে তিনি মূলত সামাজিক কুকর্ম ও অনাচারকে এবং ক্ষেত্র বিশেষে ব্যক্তিগত বিষয়কেও টেনে এনেছেন যা ভাবাবেগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিবেচনার অবকাশ রাখে। আজকালও সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কোন কোন সাংবাদিক ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে মূল রিপোর্টটিতে রং লাগাতে গিয়ে অনেক সময়ই মূল থেকে সরে যাবার ঘটনাও দুষ্প্রাপ্য নয়।

ভূমিকম্পটি কবে হয়?
মুন্সী আজিমুদ্দিন হানাফির পুঁথিতে ভূমিকম্পের তারিখ ও সময়ক্ষণ এভাবে বলা হয়েছে— ‘তের সত চার সনে দসা মহরমের/ করিব বিচার আমী ওক্তে আছরের।’ আবার অন্যত্র বলেছেন— ‘দসই মহরম চান রোজ শুনিবারে/ ভেজিল গজব আল্লা বাঙ্গালা মাজারে।’
পুঁথিকার মুন্সি আজিমুদ্দিন হানাফির বর্ণনা মোতাবেক বাংলা ১৩০৪ সন-এর পাশাপাশি তিনি মাসের নাম দিয়েছেন হিজরি ক্যালেন্ডারের। হিজরি মাসের সেটি ছিল ১০ই মহররম অর্থাৎ আশুরার দিন। ইসলামী বিশ্বাস মতে, এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি এবং এই দিনে পৃথিবী বিলয় হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে আশুরার দিনে সংঘটিত এ ভূমিকম্পকে অনেকে কেয়ামত হিসেবেও ভেবে নিয়েছিল। তাহলে পুঁথির বর্ণনা থেকে তারিখটি আমরা যা পাচ্ছি তা হলো— বাংলা ১৩০৪ সন/হিজরী মহররম মাস, ১০ তারিখ/রোজ শনিবার/বেলা অক্তে আছরে অর্থাৎ বিকাল বেলা। সে সময়কার রিপোর্টের সাথে বিষয়টি হুবহু মিলে যায়। বিকাল ৫-৩০-এর সময় ভূমিকম্পটি ঘটে।
পুঁথিকারের বর্ণনায় বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে । লেখার কলেবর বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি স্থানের বর্ণনা এ স্থানে পেশ করছি।
হয়বৎনগর/বৌলাই/কিশোরগঞ্জ
চালুন ধরিয়া চালে সরিসা যেমন/ ছারাফিল পায়ে জমি হিলায়ে তেমন/ এছা হিলাইল জমি হুকুমে এলাই/পহেলা ভাঙ্গিল হযরত নগর বৌলাই/ এ দুই বাটিতে জবে ধরিল নিখাস/ ভাঙ্গিয়া চুরিয়া সব কৈল নাস বাস/ ঘর বাড়ি ছিল কুঠা এমারত/পলকে গজবে দিল করিয়া গাড়ত/কার তরে বাঁচাইল আপনি খোদায়/ ভাঙ্গিয়া দলান কেহ মরিলেক ঠায়/ঠাঠ ফাঠ ছিল যত উচা বালাখানা/ এক মিলটেতে দিল করে ফিল্লা ফানা।
তরফ/শুনামগঞ্জ/ছিলট
হিনের সঙ্গেতে দেখা করে ঝটপট/ ধরিল নিখাস গিয়া তরফ ছিলট/ নগর দিপ নামে গাও ছিলট ভিতরে/ তাজিয়া লইয়া সেথা নাচা কোদা করে/ সে দিন বহুত লোক ছিল সে মোকামে/ দালান সমেত সব গেছে জাহান্নামে/ আছিল এগার সত লোক সে মোকাম/ বাচিয়াছে চার বাকি হইল তামাম/নগর দিপ ওালা লোকে পাতালে ভেজিয়া/ পৌছিল জাইয়া কম্প শুনামগঞ্জে গিয়া/ নদির কেনারা যদি ভাঙ্গিয়া পড়িল/ বস্তিতে নদির পানি চড়াও করিল / তার পরে গাও জবে হইল গরক/ বস্তির মানস গোরূ ডুবিয়া বেসক।
চানপুর/কুমিল্লা
চান পুরের খারি বিচে কুমিল্লা জেলাতে/ সে দিন অনেক নাও আছিল তাহাতে/ খারির কিনারে এক আছেত টেসিন/ বেইন্তেহা নাও সেথা থাকে রাত দিন/ ডুবিল তামাম নাও খারির ভিতর/ এক নাও তার নাহি আসিল নজর/ দুতিয়া রোজেতে লাস ভাসিয়া উঠীল/ সরকারি মানুস গিয়া তাদাত করিল/ সাত সও সাতাইস লাস পাইল একিন/ নাও কোথা গেছে তার না পাইল চিন।
ঢাকা/কলিকাতা *ত্রিপদী*
ছবি: ১৮৯৭ ভূমিকম্পে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার দৃশ্য
ঢাকা সহর কলিকাত্তা, ভাঙ্গিয়াছে আলবত্তা, বর্দ্ধমান তক হিন্দুস্তান/ চাটিগ্রাম বরিসাল, শুদারামে এই হাল, করিয়াছে গজবে ছুব্হান/ ঢাকাতে নওাব বাড়ি, আছিল খুবির কাড়ি, ভাঙ্গিয়া করল ছারখার/ মঠ মোন্দির যত তাতে, হোছেনি দালান সাতে, গারত করিল যে ঢাকার/ ঝাড় ফানুছ বেলওারি ভাঙ্গিয়াছে বাড়ি বাড়ি, জানে তাহা আল্লা কার ছাজ/ কিন্তু ঢাকাতে ভাই, লোক বেসি মরে নাই, ছয় সাত লোকের আন্দাজ।

পয়ার:
ঢাকার জেলার বিচে বটে বিক্রমপুর/ মাতব্বর বাড়ি এক আছিল মশহুর/ পাতালে গিয়াছে তাহা গজবে খোদার/ পড়িয়াছে বালুচর উপরে তাহার।
শিলং সহর গারত হইবার বয়ান *ত্রিপদী*
সিলঙ্গের হাল ভাই, দেল দিয়া শুনা চাই, কি দসা করিল সে কাদের/ জারি মরছা গায় জারা, কি হালে মরিল তারা, কোথা গেল সহর তাদের * উত্তর পুরূব কোনে, বংসি উড়া পরগনে, তরঙ্গ নামেতে সেই গ্রাম। নামি জমিদার এক, সেই গ্রামে ছিল দেখ, বলিয়া সরৎ বাবু নাম * সেখেরা তাবুত লিয়া, সে বাবুর বাড়ি গিয়া, ছাতি পিটে ঘুমিতে আছিল * গজবেতে আল্লাতালা, চৌদা জন জারি ওালা, গাওরা সহ গারত করিল/
সিলং সহর ভাই, এরূপে এলাহি সাঁই, গজবেতে পাতালে ভেজিল/ সাত লক্ষ লাস তাতে, পাত্তা গেছে এই ভাতে, আর বাকি নাহিক মিলিল/ চব্বিস ঘন্টা দিন রাতে, ভুমিকম্প ছিল তাতে, বুঝ কেছা গজব খোদার/ সহর বাহিরে জারা, আছিল বাচিল তারা, আর বাকি দোজখ মাজার/ কল্লা পুর গাও বয়ে, গিয়াছে দরিয়া হয়ে, দরিয়া হইয়া গেছে বস্তি/ কিন্তু সেই গ্রামে ভাই লোক বেসি মরে নাই, মরিয়াছে গোরূ ঘোড়া হস্তি ।

ছবি: ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে শিলংয়ের একটি ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ার দৃশ্য।

সুশঙ্গ পরগণা
পরগণা সশুঙ্গেতে, তের তোলা গ্রামেতে, পর্বত এক টুটিয়া পড়িছে/ বগা ওড়া বাঊবলা, চৈতার আওর ভালা, তিন গাও জুড়িয়া রহিছে/ আখলকলা নওা, গাও, যত আছে এই ভাও, রেতি নিকলিয়া গাঁয়ে গাঁয়ে/ওঠীয়া যে বালু ঠাডা, জমিন হৈয়াছে নাডা, চাসি লোকে করে হায় হায়/ মোছিদেক দালান চার, ছিলটেতে আছে আর, ভাঙ্গিয়া চুরিয়া হৈল নাস/ মানু গোরূ ছিল যত, জাহান্নামে গেছে কত, পাওা গেছে সাত হাজার লাস/এরূপে খাইলসা কান্দা, গজবে করিল রান্দা, আর গাও নামে গুরা রঙ্গ/ গুরারঙ্গের জমিদার, ভাঙ্গিয়াছে বাড়ি তার, কব কত গজবের ঢঙ্গ/ সশুঙ্গের রাজা তার, বাপ ভাই মরে আর, দস পুজার বাড়ি হৈল সেস/দেবতা ও সিব লিঙ্গি, ঠাকুর ঠুকুর ভাঙ্গি, কোথা গেছে না মেলে উদ্দেস/ সঙ্গেতে পাঁইতিস তন নিজ বাটি নয় জন, মৈল রাজা জঙ্গ বাহাদুরের/ সশুঙ্গের বাড়ি ভাই, বান্দিবার কাবু নাই, কিয়া এছা গজবে কাদের।
ভূমিকম্পের ফলে পাহাড় ভেঙ্গে যাওয়া, অগ্নি উদগীরণ হওয়া, আবহাওয়া গরম হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানা উপসর্গ সম্পর্কেও তিনি বর্ণনা দিয়েছেন যার কোন কোনটি অতিরঞ্জিত বলেও মনে হয়। এরূপ অনেক বর্ণনার মধ্যে মাটি ভেদ করে বড় পাথরের ঠনি উঠে আসাসহ নানা খনিজদ্রব্য উঠে আসার বিষয়গুলোও লক্ষ্য করা যায়। পুঁথিকারের ভাষায়— লাওড়ের পাহার চুরা গরক হইয়া/ ধুম নিক লিয়া দেখ দোজখ থাকিয়া/ তামাম বাঙ্গালা ছিল হইয়া আন্ধার/ আছিল চাল্লিস দিন এমনি প্রকার/ ধুমার তাছির এছা আছিল গরম/ গরমিতে হয়রান ছিল তামাম আলম/
ছবি: ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে রাস্তায় ফাটল ধরার দৃশ্য।
পুরূব তরফে এক পাহাড় ফাটীয়া/ নিকলে আগুন এক পাতালে থাকিয়া/ আমার নিকটে এসে অনেকে কহিল/ চক্ষে না দেখিয়া হিন তাজ্জবে রহিল/ এক রাত ভাটী গেনু আল সিকারেতে/দেখিনু আগুন সেই আপন চক্ষেতে/ দুই ডাল হৈয়া সেই আকাসেতে ধায়/ ঘড়ি২ জলে ঘড়ি২ নিবে জায়/ জত পুছি তত খালি পুরূবেতে কয়/ আল্লাতালা জানে খুব তাহার নিরনয়/ রাত হৈলে সেই আগ জলে সর্ব্বদায়/ রাত পসাইয়া গেলে দেখা নাহি জায়।
হাওজের বিচে উঠে যেমন ফাওারা/ পাতাল থাকিয়া পানি ছুটে সেই ধারা/ পানির সঙ্গেতে বালু কয়েলা পাথ্যর/ উপরে আসিল জেন হইল হাসর/ পর্ব্বত ফাটিয়া যে গন্ধক আর পারা/ মাপের পানসেরা কত উঠে সেই ধারা/ চর মছন্দেতে এক ঠনি উঠে ফের/ বার হাত লাম্বা সেই ছয় হাত বেড়/ আগা দিয়া বটে সাড়ে পাচ হাত মোটা/ গোড়া দিয়া ছয় হাত নাজানিবে ঝুটা/ বুঝিল কেতাব ওালা দেলেতে এয়চাই/ এই জমি আর কিবা উলটিছে ভাই/ আগীলা নবির কালে পাপের খাতের/ ঊলটিয়া যেত জমি কোরানে জাহের/ যদিশ্বাত জমি আগে নাহি উলাটিত/ কয়েলা পাথ্যর ঠনি নাহি নেকলিত।
বাংলা সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের একটি দিক হলো লোকজ ধারার সাংবাদিকতা। মুন্সি আজিমুদ্দিন হানাফি তাঁর ‘গজবনামা’ নামক পুঁথিতে সমকালীন ঘটনাটিকে ধরে রেখে বাংলাভাষাভাষী পাঠকদের সামনে ১৩০৪ বাংলা তথা ১৮৯৭ সালের বড় ভূমিকম্পের নানা ধারার বর্ণনা দিয়ে বড় কবিদের ন্যায় সমকালকেই ধারণ করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। বাংলাদেশে এ সময়ে ভূমিকম্প নিয়ে প্রায় সকল লোকের মধ্যেই এক ধরনের হৃদকম্প রয়েছে।

পুঁথিকারের এ পুঁথি পাঠ করে এ গজব থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে নিজেরা সৎ-সতর্ক থাকা এবং অন্যের ক্ষতি করার মানসিকতার পরিবর্তনে যদি সবাই প্রয়াস নেয় তাহলে এটি হবে ব্যক্তি গঠনের এবং জাতি গঠনের এক অনুপ্রেরণার উৎস। কেননা কখন কোন সময় বিনা নোটিশে এ ধারার গজবের সম্মুখীন আমরা হয়ে যাবো তাতো আর বুঝার কোন উপায় নেই। অন্যদিকে নিজ দায়িত্বে সতর্কতা, অন্যকে সতর্ক করে তোলার ক্ষেত্রে এ ধারার লেখা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
- মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম

এই ভুমিকম্পের কিছু ফটোগ্রাফি:

Sand boil after the Assam earthquake (1897). (Courtesy of the National Information Service for Earthquake Engineering, EERC, University of California, Berkeley).





A photograph of the earth heaving at Beachport after the 1897 earthquake. (Mt Gambier Library:Les Hill Collection)



A collapsed portico in Calcutta from LaTouche's (1897) Nature account written ten days after the earthquake, and published 22 July 1897. In his article LaTouche emphasizes shoddy construction as the chief reason for collapse in the city.

A sand vent near Rowmari photographed by LaTouche and reproduced by Oldham (1899), Plate 11. La Touche remarks in his report: "Subsequent to the ejection of sand, the surface sank down to a depth proportional to the amount of the material ejected, and several crater-like hollows were formed as the water drained back into the fissure. (Oldham, 1899 p258)

The Shillong Bazaar before and after the earthquake.

The bridge across the almost empty Ward Lake in Shillong after the 1897 earthquake, and in 2003, reconstructed with lateral stays. The dam holding the waters of the artificial lake burst in the earthquake, killing Mr. J.W. Rossenrode, a retired surveyor and a child.




A rare picture of Wards Lake, then Sir Polok's Lake of Shillong- just after the Assam earthquake of 12 June, 1897.


Post a Comment

[blogger]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget